২৬ মার্চ অস্তিত্বই ছিলো না জিয়ার তবুও বিএনপির মিথ্যাচার

1 min read

নিউজ ডেস্ক: ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অথচ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে কুতর্ক জারি রেখেছে বিএনপি। সেসময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে কেউ চিনতোই না। তার কোনো অস্তিত্বই ছিলো না।

প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য একটি চূড়ান্ত ঘোষণায় পৌঁছতে বঙ্গবন্ধুকে দীর্ঘ ২৪টি বছর বাঙালি জাতিকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য স্থির করে, ধাপে ধাপে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনা করে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে, শাসকগোষ্ঠীর সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, জেল-জুলুম-হুলিয়া-ফাঁসির মঞ্চকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয়ী শক্তি নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়েছে। একদিনে হয়নি। বহু বছর ধরে, অগণিত মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাকে শিরোধার্য জ্ঞান করেছে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন ঘুমন্ত বাঙালি জাতির উপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা শুরু করে তখন ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়িতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেন। ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বলে বিভিন্ন নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতা ঘোষণার খবর প্রকাশ করে পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন। এছাড়াও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী স্বাধীন বাংলা সরকারও এই ঘোষণাটি প্রচার করে বিভিন্ন দেশে।

ইংরেজিতে লেখা সেই ঘোষণা পত্রে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘This may be my last message, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved’.

এর বাংলা অনুবাদ দাঁড়ায় এমন: ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’ (সূত্র: অসমাপ্ত আত্মজীবনী)।

বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বাংলাদেশের সর্বত্র ওয়্যারলেস, টেলিফোন ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। এই বার্তা প্রেরণের পরে বঙ্গবন্ধু আরেকটি লিখিত বার্তা সর্বত্র প্রেরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু প্রেরিত দ্বিতীয় বার্তায় বলা হয়, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নাই। জয় আমাদের হবেই। পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক প্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুণ। জয় বাংলা’।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঐদিন রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায় এবং এর তিন দিন পর তাঁকে বন্দী অবস্থায় পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত এই ঘোষণাটিই ’৭১-এর ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ কর্তৃক গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৬নং প্যারায় অনুমোদিত হয়ে সাংবিধানিক বৈধতা অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণাই ২৬ মার্চ দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম বেতার থেকে এমএ হান্নানের কণ্ঠে বারবার প্রচারিত হয়েছে।

২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কোনো রেকর্ড নেই। এমনকি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ‘প্রামাণ্যকরণ কমিটি’র চেয়ারম্যান মফিজউল্লাহ কবীর ও হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ সংকলনের ৩নং খণ্ডে আছে, ‘জিয়াউর রহমান মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ২৭ মার্চ ঘোষণা দেন।’ কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে ২৬ তারিখ। জেনারেল শফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফ, মেজর রফিক ইতোমধ্যে ডিফেক্ট করে যুদ্ধ শুরু করেছেন। সুতরাং ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কথা মোটেও সত্য না। যারা ২৬ মার্চ জিয়ার ঘোষণার কথা বলে, তারা অসত্য কথা বলে। বাস্তবের সঙ্গে যার কোনো মিল নেই। স্বাধীনতা মুক্তিসংগ্রামের সময় জিয়ার কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। বাংলাদেশের প্রথম সরকার- মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে সেই সরকারের অধীনে একজন কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান।

+ There are no comments

Add yours