মুক্ত হচ্ছেন খালেদা জিয়া

1 min read

নিউজ ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অতি শিগগিরই মুক্তি পেতে পারেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমন খবর চাউর হবার পর হতাশায় দিন পার করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা চিন্তা করছেন, এতো দিন যদিও তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কাজ করেছে। খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে গেলে, সে বিষয়ে আর কোনো আন্দোলন করা যাবে না। ফলে আর কোনো কাজই থাকবে না।

অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রেক্ষিতে বিএনপিতে এখন জাঁকিয়ে বসেছে পরিবারতন্ত্র। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, বোন এবং বোনের স্বামী এখন বিএনপির নীতিনির্ধারক এবং মূলব্যক্তি হয়ে গেছেন। এখন তারাই বেগম জিয়াকে বলছেন যে বিএনপিতে কি কি করা উচিৎ, কোন নেতার কি দায়িত্ব পালন করা উচিৎ এবং বিএনপি এরপর কোন পথে এগোবে।

বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরেই পরিবারতন্ত্রের কথা আলোচনা হচ্ছিলো। বিশেষ করে বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে, খালেদা জিয়ার প্রয়াত বড়বোন খুরশিদ জাহান হক, খালেদা জিয়ার ভাই প্রয়াত সাইদ এস্কান্দার- এরাই মূলত বিএনপিতে ক্ষমতাসীন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার এবং তারেক রহমান লন্ডনে থাকার পর বিএনপিতে পরিবারতন্ত্র কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। সেসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দই বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতেন এবং লন্ডন থেকে তারেক রহমানও কিছু কিছু সিদ্ধান্ত দিতেন।

কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠরা মনে করেন। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির যে তিনটি পথ খোলা ছিল, সেই তিনটি পথেই বিএনপির নেতৃবৃন্দরা দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারেননি বলে বেগম জিয়ার পরিবারের ধারণা।

বেগম জিয়ার মুক্তির তিনটি পথের মধ্যে প্রথম পথটি হলো আইনি লড়াই। সেই আইনি লড়াইয়ে বিএনপির আইনজীবীরা এমন সব কর্মকাণ্ড করেছেন যাতে বটতলার উকিলরাও করে না বলে মন্তব্য করেছেন বেগম জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য।

আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টিও বিএনপি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। কার্যত কোনো আন্দোলনই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য গড়ে তুলতে পারেননি বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

আর খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার যে এই কৌশল, সেই কৌশলও বিএনপি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করতে পারেননি। ফলে এর প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে ছোটভাই শামীম এস্কান্দার, ছোটবোন সেলিনা ইসলাম এবং বোনের স্বামী। এছাড়াও লন্ডন থেকেও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এতো কিছুর পর, যখন সময় ব্যর্থ হয়, তখন সরকারের অনুকম্পায় মুক্ত হতে যাচ্ছেন বেগম জিয়া।

আগামী দিনে বিএনপিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মর্যাদা এবং অবস্থান আরও খারাপ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরাই এখন বিএনপির মূল হর্তাকর্তা হবেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, নিশ্চয়ই সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে শামীম এস্কান্দারসহ পরিবার সরকারের সঙ্গে একটি আপোষরফার মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করেছেন। সেই আপোষরফার শর্ত কি আমরা তা জানি না। তবে নিশ্চয়ই সেই আপোষরফায় সরকারের সঙ্গে সামলে চলার একটি নীতির ব্যাপারে দুইপক্ষ এক হয়েছেন। পরিবার সেটি বিএনপির কাছে প্রকাশ করতেও রাজি নন।

কাজেই এটা বোঝাই যাচ্ছে যে, আগামী দিনে বিএনপি যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতৃবৃন্দের, বিশেষ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাসসহ স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দের কোনো ভূমিকা থাকবে না। বরং, পরিবারের যে সদস্যরা রয়েছেন বিশেষ করে তারেক রহমান (যদিও খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক আগের মতো শীতল, তারপরেও তিনি বেগম জিয়ার একমাত্র জীবিত পুত্র, বিএনপিতে তার প্রভাব অবশ্যই থাকবে), তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান, কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, ভাই শামীম এস্কান্দার, বোন সেলিনা ইসলাম এবং বোনের স্বামী রেজাউল ইসলামসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা দলে গুরুত্বপূর্ণ হবেন। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তার বাস্তবায়নই হবে দলের একমাত্র কাজ। এভাবেই বিএনপি হয়ত সামনের দিনগুলোতে এগোবে।

+ There are no comments

Add yours